দ্বিতীয় বিবরণ
গ্রন্থস্বত্ব
মোশি দ্বিতীয় বিবরণ পুস্তকটি লিখেছিলেন, ঠিক তাদের জর্ডান নদী পার হওয়ার পূর্বে, যা আসলে ইস্রায়েলের প্রতি তার উপদেশের সংগ্রহ হচ্ছে। “এইগুলো হচ্ছে সেই বাক্য সমূহ যা মোশি বলেছিলেন” (1:1). আর কেউ (হয়ত য়িহোশুয) শেষ অধ্যায়টি লিখে থাকতে পারেন। পুস্তকটি নিজেই এর বেশির ভাগ বিষয় বস্তুকে মোশির রচয়িতা বলে বিবেচনা করে (1:1, 5; 31:24)। দ্বিতীয় বিবরণ মোশির এবং মোয়াব অঞ্চলে ইস্রায়েলীদের অবস্থান নির্দেশ করে সেই ক্ষেত্রে যেখানে জর্ডান নদী মৃত সমুদ্রের মধ্যে প্রবাহিত হয় (1:5)। দ্বিতীয় বিবরণের অর্থ হলো “দ্বিতীয় বিধান।” এটা ঈশ্বর এবং তাঁর প্রজাদের মধ্যে নিয়মের পুনরুক্তি হচ্ছে।
রচনার সময় এবং স্থান
আনুমাণিক 1446 থেকে 1405 খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়।
এই পুস্তকটি ইস্রায়েল কতৃক প্রতিশ্রুত দেশে প্রবেশের পূর্বে ৪0 দিনের মধ্যে লেখা হয়েছিল।
গ্রাহক
ইস্রায়েলীদের একটি নতুন প্রজন্ম যারা প্রত্রিশ্রুত দেশে প্রবেশ করতে প্রস্তুত ছিল, তাদের পিতা-মাতাদের মিশরের দাসত্ব থেকে রক্ষা পাওয়ার 40 বত্সর পরে এবং পরবর্তী সমস্ত বাইবেল পাঠকগণ।
উদ্দেশ্য
দ্বিতীয় বিবরণ হচ্ছে জাতির প্রতি মোশির বিদায় সম্ভাষণ। ইস্রায়েল নিজেকে প্রস্তুত করে রেখেছিল প্রতিশ্রুত দেশে প্রবেশ করতে। মিশরের থেকে নির্গমণের ৪0 বত্সর পরে, জাতিটি জর্ডান নদী অতিক্রম করে কনানকে জয় করতে প্রস্তুত ছিল। যাইহোক, মোশির মৃত্যু হওয়ার ছিল এবং তিনি জাতির সঙ্গে দেশে প্রবেশ করবেন না। মোশির বিদায় সম্ভাষণ একটি আবেগপ্রবণ অনুনয় হচ্ছে জাতির জন্য ঈশ্বরের আজ্ঞা সমূহকে মান্য করা যাতে করে নতুন দেশে তাদের পক্ষে এটা মঙ্গল জনক হয় (6:1-3; 17-19)। সম্ভাষণ লোকেদের স্মরণ করিয়ে দেয় তাদের ঈশ্বর কে হচ্ছেন এবং তাদের জন্য তিনি কি করেছেন (6:10-12; 20-27)। মোশি লোকেদের অনুনয় করেন এই আজ্ঞা সমূহ পরবর্তী প্রজন্মর নিকট পৌঁছে দিতে (6:6-9)।
বিষয়
আজ্ঞাকারিতা
রূপরেখা
1. মিশর থেকে ইসরায়েলের যাত্রা — 1:1-3:29
2. ঈশ্বরের সঙ্গে ইস্রায়েলের সম্পর্ক — 4:1-5:33
3. ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যের গুরুত্ত্ব — 6:1-11:32
4. কিভাবে ঈশ্বরকে প্রেম করতে হয় এবং তাঁর আজ্ঞা সমূহকে মানতে হয় — 12:1-26:19
5. আশ্বীর্বাদ এবং অভিশাপ — 27:1-30:20
6. মোশির মৃত্যু — 31:1-34:12
মোশির প্রথম বক্তৃতা।
1
ইসরায়েলীয়দের হোরেব থেকে প্রস্থানের আদেশ।
যর্দ্দন নদীর পূর্ব পারে অবস্থিত মরুপ্রান্তে, সূফের বিপরীতে অরাবা উপত্যকায়, পারণ, তোফল, লাবন, হৎসেরোৎ ও দীষাহবের মাঝখানে মোশি সমস্ত ইস্রায়েলকে এই সব কথা গুলি বললেন। সেয়ীর পর্বত দিয়ে হোরেব থেকে কাদেশ বর্ণেয় পর্যন্ত যেতে এগারো দিন লাগে। সদাপ্রভু যে সব কথা ইস্রায়েলের লোকদেরকে বলতে মোশিকে আদেশ দিয়েছিলেন, সেই অনুযায়ী মোশি (মিশর ছেড়ে আসার) চল্লিশ বছরের এগারো মাসের প্রথম দিনের তাদেরকে বললেন। পরে তিনি ইমোরীয়দের রাজা সীহোনকে, যিনি হিষ্‌বোনে বাস করতেন এবং বাশনের রাজা ওগকে, যিনি ইদ্রিয়ীর অষ্টারোতে বাস করতেন তাদেরকে আঘাত করলেন। যর্দ্দনের পূর্ব পারে মোয়াব দেশে মোশি এই ব্যবস্থা ব্যাখ্যা করতে লাগলেন; তিনি বললেন, “আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু হোরেবে আমাদেরকে বলেছিলেন, ‘তোমরা এই পর্বতে অনেক দিন বাস করেছ; তোমাদের যাত্রা শুরু কর, ইমোরীয়দের পার্বত্য অঞ্চলে এবং তার কাছাকাছি সব জায়গায়, অরাবা উপত্যকায়, পাহাড় অঞ্চলে, নীচু জায়গায়, দক্ষিণ প্রদেশে ও মহাসমুদ্রতীরে, মহানদী ফরাৎ পর্যন্ত কনানীয়দের দেশে ও লিবানোনে প্রবেশ কর। দেখ, আমি সেই দেশ তোমাদের সামনে দিয়েছি; তোমাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবকে এবং তাদের পরবর্তী বংশকে যে দেশ দিতে সদাপ্রভু দিব্যি করেছিলেন, তোমরা সেই দেশে গিয়ে তা অধিকার কর।’ ”
প্রধানদের নিযুক্তি
সেই দিনের আমি তোমাদেরকে এই কথা বলেছিলাম, “তোমাদের ভার বহন করা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। 10 তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের বৃদ্ধি করেছেন, আর দেখ, তোমরা আজ আকাশের তারার মত বহুসংখ্যক হয়েছ; 11 তোমরা যেমন আছ, তোমাদের পূর্বপুরুষ ঈশ্বর সদাপ্রভু তা থেকে তোমাদের আরও হাজার গুণ বৃদ্ধি করুন, আর তোমাদেরকে যেমন বলেছেন, সেরকম আশীর্বাদ করুন। 12 কেমন করে আমি একা তোমাদের বোঝা, তোমাদের ভার ও তোমাদের বিবাদ সহ্য করতে পারি? 13 তোমরা নিজেদের বংশের মধ্যে জ্ঞানবান, বুদ্ধিমান্‌ ও পরিচিত লোকদেরকে মনোনীত কর, আমি তাদেরকে তোমাদের প্রধান হিসাবে নিযুক্ত করব।” 14 তোমরা আমাকে উত্তর দিয়ে বললে, “তুমি যা বলছ, তাই করা ভাল।” 15 তাই আমি তোমাদের বংশগুলির প্রধান, জ্ঞানবান ও পরিচিত লোকদেরকে গ্রহণ করে এবং তোমাদের উপরে প্রধান, তোমাদের বংশ অনুযায়ী সহস্রপতি, শতপতি, পঞ্চাশৎপতি, দশপতি ও কর্ম্মচারী করে নিযুক্ত করলাম। 16 আর সেইদিনের তোমাদের বিচারকর্তাদেরকে আমি এই আদেশ করলাম, “তোমরা তোমাদের ভাইদের বিবাদের কথা শোন এবং একজন লোক ও তার ভাই এবং তার সঙ্গী বিদেশীর মধ্যে ন্যায় বিচার করো। 17 তোমরা বিচারে কারও পক্ষপাত করবে না; সমানভাবে ছোট ও মহান উভয়ের কথা শুনবে; মানুষের মুখ দেখে ভয় করবে না, কারণ বিচার ঈশ্বরের এবং যে ঘটনা তোমাদের পক্ষে কঠিন, তা আমার কাছে আনবে, আমি তা শুনব।” 18 সেই দিনের আমি তোমাদেরকে যে সব কাজ করতে হবে সেই বিষয়ে আদেশ দিয়েছিলাম।
গুপ্তচরদের প্রেরণ করা হলো
19 পরে আমরা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদেশ অনুসারে হোরেব থেকে চলে গেলাম এবং ইমোরীয়দের পাহাড়ি দেশে যাবার পথে তোমরা সেই যে বিশাল ও ভয়ঙ্কর মরুভূমি দেখেছ, তার মধ্যে দিয়ে যাত্রা করে কাদেশ বর্ণেয়ে পৌঁছালাম। 20 পরে আমি তোমাদেরকে বললাম, “আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদেরকে যে দেশ দিচ্ছেন, ইমোরীয়দের সেই পাহাড়ি দেশে তোমরা পৌঁছালে। 21 দেখ, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু সেই দেশ তোমার সামনে দিয়েছেন; তুমি নিজের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কথা অনুসারে উঠে ওটা অধিকার কর; ভয় পেয় না ও নিরাশ হয়ো না।” 22 তখন তোমরা সবাই আমার কাছে এসে বললে, “আগে আমরা সে জায়গায় লোক পাঠাই; তারা আমাদের জন্য দেশ খুঁজে বের করুক এবং আমাদেরকে কোন্‌ পথ দিয়ে উঠে যেতে হবে ও কোন্‌ কোন্‌ শহরে আসতে হবে, তার খবর নিয়ে আসুক।” 23 তখন আমি সে কথায় সন্তুষ্ট হয়ে তোমাদের প্রত্যেক বংশ থেকে এক জন করে বার জনকে নিলাম। 24 পরে তারা পার্বত্য অঞ্চলে গিয়ে উঠল এবং ইষ্কোল উপত্যকায় এসে সেই দেশের খোঁজ করল। 25 আর সেই দেশের কতগুলো ফল হাতে নিয়ে আমাদের কাছে এসে খবর দিল, বলল, “আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদেরকে যে দেশ দিচ্ছেন, সেটা ভালো।”
সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ
26 তবুও তোমরা সেই জায়গায় যেতে রাজি হলে না; কিন্তু তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদেশের বিরোধিতা করলে; 27 নিজেদের তাঁবুতে অভিযোগ করে বললে, “সদাপ্রভু আমাদেরকে ঘৃণা করলেন বলেই তিনি আমাদেরকে মিশর দেশ থেকে বের করে আনলেন যেন আমরা ইমোরীয়দের হাতে পরাজিত হই। 28 আমরা কোথায় যেতে পারি? আমাদের ভাইয়েরা আমাদের মন গলিয়ে দিল, বলল, ‘আমাদের থেকে সে জাতি মহৎ ও উচ্চ এবং শহরগুলো অনেক বড় ও আকাশ পর্যন্ত দেওয়ালে ঘেরা; আরও সে জায়গায় আমরা অনাকীয়দের ছেলেদেরকেও দেখেছি।’ ” 29 তখন আমি তোমাদেরকে বললাম, “ভয় কর না, তাদের থেকে ভীত হয়ো না। 30 তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যিনি তোমাদের আগে আগে যান, তিনি মিশর দেশে তোমাদের চোখের সামনে তোমাদের জন্য যে সব কাজ করেছিলেন, সেই অনুযায়ী তোমাদের জন্য যুদ্ধ করবেন। 31 এই মরুভূমিতেও তুমি সেরকম দেখেছ; যেমন বাবা নিজের ছেলেকে বহন করে, তেমনি এই জায়গায় তোমাদের আসা পর্যন্ত যে রাস্তায় তোমরা এসেছ, সেই সব রাস্তায় তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে বহন করেছেন।” 32 কিন্তু এই কথায় তোমরা নিজেদের ঈশ্বর সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করলে না, 33 যিনি তোমাদের তাঁবু রাখার জায়গা খোঁজ করতে যাওয়ার দিন তোমাদের আগে আগে গিয়ে রাতে আগুনের মাধ্যমে ও দিনের মেঘের মাধ্যমে তোমরা কোন পথে যাবে সেই রাস্তা দেখাতেন। 34 সদাপ্রভু তোমাদের কথার আওয়াজ শুনে রেগে গেলেন ও এই দিব্যি করলেন, 35 “আমি তোমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যে দেশ দিতে শপথ করেছি, এই দুষ্ট বংশীয় মানুষদের মধ্যে কেউই সেই ভালো দেশ দেখতে পাবে না, 36 কেবল যিফূন্নির ছেলে কালেব তা দেখবে এবং সে যে জায়গায় পা দিয়েছে; সেই ভূমি আমি তাকে ও তার ছেলেমেয়েকে দেব; কারণ সে পুরোপুরিভাবে সদাপ্রভুর অনুসরণ করেছে।” 37 সদাপ্রভু তোমাদের জন্যে আমার প্রতিও রেগে গেলেন, তিনি আমাকে এই কথা বললেন, “তুমিও সে জায়গায় যেও না। 38 তোমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নূনের ছেলে যিহোশূয় সেই দেশে যাবে; তুমি তাকেই আশ্বাস দাও, কারণ সে ইস্রায়েলকে তা অধিকারের জন্য নেতৃত্ব দেবে। 39 আর এরা শিকার হবে, এই কথা তোমরা নিজেদের যে ছেলেদের বিষয়ে বললে এবং তোমাদের যে ছেলে মেয়েদের ভাল মন্দ জ্ঞান আজ পর্যন্ত হয়নি, তারাই সেই জায়গায় যাবে; তাদেরকেই আমি সেই দেশ দেব এবং তারাই তা অধিকার করবে। 40 কিন্তু তোমরা ফের, সূফসাগরের পথ দিয়ে মরুপ্রান্তে যাও।” 41 তখন তোমরা উত্তর করে আমাকে বললে, “আমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করেছি; আমরা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সমস্ত আদেশ অনুসারে উঠে গিয়ে যুদ্ধ করব।” পরে তোমরা প্রত্যেক জন যুদ্ধের অস্ত্রে সজ্জিত হলে এবং পার্বত্য অঞ্চলে আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত হলে। 42 তখন সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “তুমি তাদেরকে বল, তোমরা যুদ্ধ করতে যেও না, কারণ আমি তোমাদের মাঝখানে নেই; যদি শত্রুদের সামনে আহত হও।” 43 আমি তোমাদেরকে সেই কথা বললাম, কিন্তু তোমরা সে কথায় কান দিলে না; বরং সদাপ্রভুর আদেশের বিরুদ্ধাচারণ করে ও দুঃসাহসী হয়ে পর্বতে উঠছিলে। 44 আর সেই পাহাড় নিবাসী ইমোরীয়েরা তোমাদের বিরুদ্ধে বের হয়ে, মৌমাছি যেমন করে, তেমনি তোমাদেরকে তাড়া করল এবং সেয়ীরে হর্মা পর্যন্ত আঘাত করল। 45 তখন তোমরা ফিরে আসলে ও সদাপ্রভুর কাছে কাঁদলে; কিন্তু সদাপ্রভু তোমাদের আওয়াজে কান দিলেন না, তোমাদের কথায় মনোযোগ দিলেন না। 46 সুতরাং তোমাদের বসবাসের দিন অনুসারে কাদেশে অনেক দিন থাকলে।